১। ক্লাস শেষ করে, ক্যেফেতে গিয়ে ভালো একটা আড্ডা দিয়ে বন্ধুর বাইকে করে বাড়ি ফিরলেন, কিন্তু ঘরে পৌঁছে শুনলেন আপনার বন্ধু বাড়ি পৌছাতে পারে নি। সে ডিজেল এর জন্যে এক ফিলিং স্টেশনে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিল । কিন্তু হঠাৎ সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে।
ইশ! আজ যদি ক্যেফেতে সময় নষ্ট না করে বাসায় ফিরে আসতেন। তাহলে এবারের বিস্ফোরণ আপনার বন্ধুকে কেড়ে নিতে পারতো না।
২। মার্কেটে যাচ্ছেন, অটো থেকে নেমে ভাড়া পরিশোধ করবেন। ওয়ালেটে ভাংতি ১৫০ টাকা, আর বাকি সব ৫০০ বা ১০০০ টাকা নোট।তাকে টাকা ভাঙ্গানির পেরেশানি না দিয়ে আপনি ভাংতি টাকায় ভাড়া পরিশোধ করলেন। আপনি মার্কেটে ঢুকলেন আর আপনাকে নিয়ে আসা অটোটা বাসের চাপায় পিষে গেলো।
ইশ! লোকটাকে যদি ৫০০ টাকা নোট দিতেন! ভাঙ্গাতে যাওয়ার জন্যে হলেও কিছুটা সময় পাড় করে ফিরে গেলে আজ সে বেঁচে যেতো।
৩। আপনার একমাত্র ফুপা বিদেশ থাকে, ফুফুর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। প্রথম ছেলেকে দেখতে লোকটা তাড়াহুড়া করে মার্কেট করতে গিয়ে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা গিয়েছে। তার এই মৃত্যুর কারণ তাড়াহুড়া। আর তাড়াহুড়ার কারণ কি? ইশ! তাকে যদি না ই জানানো হতো।
৪।মোবাইলটার র্যাম কম, কেবল বাফারিং করে। মারলেন এক আছাড়। তুলে দেখেন সব ঠিক আছে। কিছুক্ষন টের পেলেন মোবাইলটা গরম হয়ে রি-স্টার্ট নিচ্ছে। ইশ! আপনি যদি আছাড় না দিতেন।
৫। আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা স্কুল আর কলেজ জীবনে বেশ শাসনে ছিল। জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হয়ে ক্যেম্পাসে থাকা শুরু করল। একবার কয়েক বন্ধু মিলে লেকে গেলো গোসল করতে। সবাই আছে কিন্তু সে নাই। তার ডিপার্টমেন্টে নতুন আরেকজন নেওয়া হচ্ছে। ওয়েটিং এ থাকা সবার প্রথম ব্যেক্তিটা আপনি।
৬। আপনার বড় ভাই বেশ কড়া, সে নিজের বন্ধুর সাথে বেড়াতে যায় না তার কারণে আপনিও যেতে পারেন না। বড় ভাই চাকরী পেয়ে বিদেশ চলে গেছে। এই সুযোগে ১০-১২ জন মিলে কক্সবাজার গেলেন। আপনার সবাই ভালো আছেন কিন্তু ক্লাসের প্রথম ছাত্রটা আর ভাসতে পারে নি।
৭। আপনার ব্যেচে আপনার বিয়ে হচ্ছে বাকি সবার শেষে। আপনার একজন ক্লাসম্যাট ২ মাসের প্রেগন্যান্ট টিভিতে খবরে বলছে, নবজাতক কে পাট ক্ষেতে ফেলে পালিয়েছে তার মা, বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে বাচ্চাকে উদ্ধার করে গ্রামবাসী। আপনার বিয়েতে শখ করে কাজ করতে গিয়ে বাচ্চা এবরশন হয়ে গিয়েছে।
৮।চাকরীর সার্কুলারে ভ্যেকেন্সি ছিল ১০ জনের। অতিসত্বর একজন এমপ্লয়ি মারা যাওয়ায় আপনার রোল ১১ তে চলে এসেছে।
সারাদিনের কাজ করার জন্যে আমরা সাধারণত এমন ভাবে চলি যে, আমরা আমাদের চোখের একেবারে সামনের কতগুলো সরল সমীকরণকে মিলাতে পারি না। দেখে অন্তত চমকেও উঠি না। কেন উঠি না সেটা আমি জানি না। কিন্তু অনেকেই চমকে উঠে সেটা জানি।
যারা এগুলোতে শিক্ষার ফসল হিসেবে দেখতে পায়, এতে নিজের যোগ্যতা খুজে পায়, আল্লাহের অস্তিত্ব খুজে পায়, ঈমান খুজে পায়। তারা ঠিকই চমকে উঠে আবার অন্যকে বলে বেড়ায়।
হবে হয় তো, বেগম রোকেয়ার কথা সত্য! আমাদের শিক্ষা নাই তাই আমরা সমীকরণ গুলোকে চিনতে পারি না। অবহেলায় সেখান থেকে চোখ ফিরিয়ে নিই। তার কথাই ঠিক, আমরা যাকে উচ্ছিষ্ট, কর্দমা, কঙ্কর ভেবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলি তা থেকেই শিক্ষিত লোকেরা দামি জিনিস খুজে বের করে উপার্জন করেন। আমরাই কেবল রয়ে যাই কলুর বলদের মতো।
আল্লাহ্ এর অস্তিত্বের নিদর্শন গুলো সামনে আসার পরও সেগুলোকে চিনতে পারি না, বুঝতে পারি না, কেবল বুঝতে পারি না এমন না বুঝার চেষ্টাও করি না, খুজি না এতো সুন্দর করে একটা রুটিন কি করে নিজে নিজে হয়ে যেতে পারে!!
অনেকেই বলতে পারে, আমি ঈমানদার আমার বিশ্বাসে আল্লাহ্ আছে। আল্লাহ্কে আবার খুজে বেড়াবার দরকার? বিশ্বাসে আল্লাহ্ থাকাই যদি যথেষ্ট হতো তাহলে “হে ঈমানদাঁর গণ” বলে আল্লাহ্ আমাদেরকে এতবার ডাকতেন না।
আমাদেরকে যখন কেউ কোন সময় টেলিফোনে বা চিঠিতেই প্রাণ নাশের হুমকি দেয়, আমরা হুমকি দাতার অস্তিত্বকে বাস্তব মানি। তাঁকে নিয়ে এটা বলি না-
- আমাকে হুমকি দাতার হুমকিতে বিশ্বাস করাটা কতটা জরুরী?
- হুমকিদাতা আমাদেরকে যদি আসলেই হুমকি দিয়ে থাকে তাহলে তাকে আগে হুমকি দিয়েছিল কে? তাকে হুমকি না দিলে সে হুমকি দিলো কি করে? সে হুমকি দাতা হল কি করে?
- হুমকি দাতার কাজে বিজ্ঞান আছে?
এই হুমকিটা একটা সত্বার কাছ থেকে এসেছে সেটা বুঝতে পারি, এবং মানি। কিন্তু যে বলেছে সে আসলেই আছে কি না, নাই সেটা বিবেচনা করি??
“অবশ্যই আছে” সেটা মেনে নিয়েই আমরা আইনের আশ্রয় নিই। কিন্তু সেই নিরাকার স্বত্বার কথা তো আমরা কানে নিই না।
যে আমাদেরকে ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ অনুস্মরণ করতে বলেছেন। আমাদেরকে বলেছেন,”দেখো, জুলুম করোনা। আমি মজলুমের পক্ষে।“
যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে। আর মৃত্যুর পর তোমার কাছ থেকে তোমার সকল কাজের হিসাব নেওয়া হবে। বাদ যাবে না সরিষার দানার সমান আমলও। আমি কসম করে বলছি, সেদিন আমি কারো উপর জুলুম করবো না। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবো।
যে মিথ্যাবাদী প্রমাণ হবে তাঁকে আমি জাহান্নামে দিবো। যার আগুণ তাঁকে এমন ভাবে ছেয়ে নিবে যে, মিথ্যাবাদী নিজের মৃত্যু কামনা করতে থাকবে। কিন্তু…………………………………………!!!!”
তিনি তো আমাদেরকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন নি। দিয়েছেন কত গুলো সু-সংবাদ। দিয়েছেন একটা সরল সহজ কিন্তু পরীক্ষা বহুল পথ। সতী হলে অগ্নি পরীক্ষায়ও সীতার মতো নির্ভীক থাকা উচিত। অন্তত পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলার দরকার থাকার কথা না।
এমনই হাজারও নিদর্শনের মাঝের কতগুলো একেবারেই সত্য হয়ে আমার সামনে ফুটে উঠেছে। কিন্তু আমাদের মনে সত্যকে মেনে নেওয়ার মতো সাহস গড়ে উঠে নি।
আমরা মানতে নারাজ আমরা আজকের দিনে যা করছি সেটা আমাদের ওয়াদার বাইরে আমরা আল্লাহের সাথে যে ঈমানের ওয়াদা করে এসেছি, সেটা আর আজকের আমদের কথা বার্তা, চাল চলন, উঠা বসা সব কিছুই বিপরিত।
আমরা ভালো থাকি, কিন্তু আবার বলি, জীবন তো একটাই, জীবনে সময় একবারই আসে। বলে আবার আল্লাহের সাথে নাফরমানী শুরু করি।
আমরা ঈমানকে শয়তানের যুক্তির সামনে দাড় করাই, তার পরীক্ষা নিই। আল্লাহের আদেশ মানার বদলে ঈমানকে পরীক্ষায় ফেলি, শয়তানের কাছে ছোট করি, আমরা গুনাহ করি, তারপর আমলের বদলে ঈমানকে সাদরে গ্রহণ বা পুরস্কৃত করার বদলে আবারও পরীক্ষায় ফেলি, জুলুম করি।
এভাবে আমাদের অধঃপতনের শুরু হয়। এর কোন এক পর্যায়ে গিয়ে আমরা মনে মনে বলি, আল্লাহ্ তো শয়তানের কাছে ওয়াদা করেছে যে, আমার বান্দা যতবার মাফ চাইবে আমি ততবারই মাফ করে গুনাহ মুক্ত করে দিবো।
আমরা ভাবি, আমরাও গুনাহ করে মাফ চাইবো।আল্লাহ্ তো মাফ করবেনই। আর আল্লাহ্ যদি আমাদেরকে মাফ না করেন তাহলে কি !!!
(আমাদের মনে শয়তান এমন একটা যুক্তি দাড় করায় যে আমরা নফসের সাথে বলি, আমাদেরকে মাফ না করলে আল্লাহ্ নিজের কাছে, নিজের অহংকারের কাছে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হবেন।
####নায়ুজুবিল্লাহ্।
শয়তানকে অহংকারী হওয়ার কারণে আল্লাহের খারাপ লেগেছিল। আজ আমাকে মাফ না করলে আল্লাহ্ আমার কাছে ছোট হবেন, মানে আমার পিছনের শয়তানের কাছে ছোট হয়ে যাবেন। আল্লাহের নিজের ইজ্জাত বাঁচাতে আমাদেরকে মাফ করতেই হবে।
####নায়ুজুবিল্লাহ-মিন যালেখ।)
এটা ঈমান না। এটা কোন ভাবেই ঈমান না। এটা হল সেই জাতি যাদের কথা কুরআনে আছে। তারা তাদের নবীদের মোজেজা দেখতে চাইতো আর নিজেরা গুনাহ করে বিনয়ী হওয়ার বদলে কথার যুক্তি দিয়ে আল্লাহকে গুনাহ মাফ করে দিতে বলতো।